mdsaker Subscriber 2 years ago |
হযরত ওমর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ঘটনা ১
হজরত নাফে’(র) বর্ণণা করেছেন –ইবনে ওমর(রা) একবার অসুস্থ হয়ে টাটকা মাছ খাওয়ার বাসনা হল,মদীনায় অনেক খুজাখুজির পর তা পাওয়া গেল না। কয়েকদিন পর যখন পাওয়া গেল তখন দের দিরহাম দিয়ে কিনে এনে রান্না করা হল। তারপর একটা রুটির উপর মাছটা রেখে হজরত ওমর (রা) এর সামনে পেশ করা হল ,ঠিক এই সময় এক ভিক্ষুক দরজায় এসে হাক দিল। হজরত ওমর (রা) বললেন- এই মাছ উক্ত ফকিরের জন্য দিয়ে দেওয়ার জন্য. খাদেম আরজ করল জনাব অনেক দিন থেকে যখন মাছ খেতে আপনার মন চাইছিল ,তখন তা পাওয়া যায় নাই,এখন পাওয়ার পর দের দিরহার দিয়ে কিনে এন আপনার জন্য রান্না করেছি। আপনি বললে আমি ভিক্ষুককে এর মুল্য দিয়ে দেই। তিনি বললেন না,এই মাছ রুটির সাথে জরিয়ে তাকে দিয়ে দাও ,অতপর খাদেম ভিক্ষুককে বলল-তুমিএটা এক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করবে? ভিক্ষুক সম্মতি দিলে খাদেম এক দিরহামের বিনিময়ে তাকে দিয়ে আবার তার সামনে হাজির করল এবং বলল এ মাছটি আপনার জন্য এক দেরহাম দিয়ে কিনে এনেছি। হজরত ওমর (রা) আবার বলল- ভিক্ষুকের কাছ থেকে দেরহাম ফিরত না নিয়ে এই মাছ সহ রটি টা তাকে দিয়ে এসো।
হযরত ওমর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ঘটনা ২
পারস্যের নিহাওয়ান্দ প্রদেশের শাসনকর্তা হরমুযান। পর পর অনেকগুলো যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়বার পর এবং অগনিত মুসলমানকে নিজ হাতে হত্যা করার পর তিনি অবশেষে মুসলমানদের হাতে বন্ধী হলেন । হরমুযান ভাবলেন , খলিফা ওমর (রাঃ) নিশ্চয়ই তার প্রানদন্ডের হুকুম দেবেন, না হয় অন্ততঃ তাকে গোলাম হিসাবে কোথাও বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) বিশেষ কর দেওয়ার ওয়াদায় হরমুযানকে ছেড়ে দিলেন। হরমুযান নিজ রাজ্যে ফিরে ওয়াদার কথা ভুলে গেলেন। অনেক টাকা-পয়সা ও বিরাট সৈন্য সমাবেশ নিয়ে তিনি আবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। অবশেষে হনমুযান পরাজিত হয়ে আবার মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। তাকে হযরত ওমর (রাঃ) এর দরবারে হাজির করা হলে খলিফা জিজ্ঞেস করলেন,
: আপনিই কি কুখ্যাত নিহাওয়ান্দ শাসনকর্তা হরমুযান?
: হ্যাঁ খলিফা , আমিই নিহাওয়ান্দ এর অধিপতি হরমুযান।
: আপনিই বার বার আরবের মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছেন এবং বার বার অন্যায় যুদ্ধের কারন ঘটিয়েছেন?
: এ কথা সত্যি যে, আমি আপনার অধীনতা স্বীকার করতে রাজী হইনি, তাই বার বার যুদ্ধ করতে হয়েছে।
: কিন্তু এ কথা কি মিথ্যে যে, আপনাকে পরাজিত ও বন্দী করার পরও আপনার প্রস্তাবানুসারে সোলেহনামার শর্ত মতে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার আপনি সোলেহনামার শর্ত ভংগ করেছেন এবং অন্যায় যুদ্ধে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন? : এ কথা মিথ্যা নয়। : আপনি কি জানেন আপনার কি সাজা হবে?
: জানি, আমার সাজা মুত্যু এবং আমি সেজন্য প্রস্তত আছি।
: এবং এই মুহুর্তেই?
: তাও বেশ জানি।
: তা হলে আপনার যদি কোন শেষ বাসনা থাকে তা প্রকাশ করতে পারেন।
: খলিফা, মৃত্যুর আগে আমি শুধুই এক বাটি পানি খাব।
খলিফার হুকুমে বাটিতে পানি এল। হরমুযানের হাতে দেওয়া হলে খলিফা বললেন,
: আপনি সাধ মিটিয়ে পানি খেয়ে নিন।
: আমার শুধুই ভয় হয় পানি খাওয়ার সময়ই জল্লাদ না এক কোপে আমার মাথাটা দেহ থেকে আলাদা না করে দেয়।
: না হরমুযান, আপনার কোনই ভয় নেই। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এই পানি খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আপনাকে কতল করবে না ।
: খলিফা, আপনি বলেছেন এই পানি পান করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমায় কতল করবে না। ( বাটির পানি মাটিতে ফেলে দিয়ে) সত্যি
এ পানি আর আমি খাচ্ছি না এবং তাই আপনার কথা মত কেউই আমাকে আর কতল করতে পারবে না। চমৎকৃত হযরত ওমর (রাঃ) খানিক চুপ করে থেকে হেসে ফেললেন। বললেন, হরমুযান: আপনি সত্যিই একটি নয়া উপায় বের করেছেন নিজেকে রক্ষা করার জন্যে। কিন্তু ওমরও যে আপনাকে কথা দিয়েছে তার খেলাপ হবে না। আপনি আযাদ, আপনি নির্ভয়ে নিজ রাজ্যে চলে যান। হরমুযান চলে গেলেন। অল্পদিন পরে বহু সংখ্যক লোক নিয়ে আবার এলেন।খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর দরবারে হাজির হয়ে বললেন, : আমিরুল মু'মিনিন! হরমুযান আবার এসেছে। এবার সে এসেছে বিদ্রোহীর বেশে নয়, এক নব জীবনের সন্ধানে। আপনি তাকে তার অনুচরবর্গসহ ইসলামে দীক্ষিত করুন। হরমুযান আর বলতে পারলেন না। তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো। হযরত ওমর (রাঃ) দেখলেন, লৌহমানব হরমুযানের দু'চোখ পানিতে হলহল করছে । হরমুযানকে তিনি আলিংগন করলেন।
হযরত ওমর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ঘটনা ৩
সিরিয়া বিজয়ের পর যখন তিনি সে এলাকা সফর করেন, তখন সফরসঙ্গী ছিল তার এক গোলাম। আর দুজনের মধ্যে বাহন ছিল একটি মাত্র উট। কিছুক্ষণ তিনি উটে চড়তেন আর গোলাম লাগাম টানত। কিছুক্ষণ গোলাম উটে চড়ত আর তিনি লাগাম টানতেন। এভাবেই চলছিলেন পথ। সিরিয়ার প্রবেশদ্বারে এসে গোলাম আরজ করল আপনি উপরে উঠুন, নয়তো মানুষ আমাকেই খলিফা মনে করবে। হজরত ওমর (রা.) উত্তর দিলেন, কে কী মনে করল সেটা দেখার বিষয় না। সিরিয়াল মতো এবার তুমিই উটের ওপর থাকবে। খলিফাতুল মুমিনীন এভাবেই সিরিয়া প্রবেশ করছেন।
হযরত ওমর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ঘটনা ৪
'নীল নদ' হল পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ। দৈর্ঘ প্রায় ৬৬৬৯ কিলোমিটার। এটি পৃতিবীর একমাত্র নদ, যা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত।মিসরের নীল নদ সে দেশের কৃষিকার্যের প্রধানতম উৎস, কিন্তু উক্ত নদ প্রতি বছর শুকিয়ে যেত।তখন সে দেশের অধিবাসীরা প্রাচীন প্রথানুযায়ী একটি সুন্দরী কুমারীকে নীল নদের বুকে বলি দান করতো। ফলে নীল নদ পূর্বের ন্যায় প্রবাহিত হত। এ প্রসঙ্গে বলা যায়- কালের বিবর্তনে নীল নদের পানি ব্যবস্থাপনা জিনদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তারা ফি বছর বা প্রতি বছর নীল নদের পানি আটকিয়ে কৃষককুলকে জিম্মি করে রাখতো। প্রতি বছর একটি সুন্দরী নারীকে নীল নদে বলি দানের বিনিময়ে তারা পানি ছেড়ে দিত। পরবর্তীকালে হযরত ওমর (রাঃ) এর আমলে মিসরে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। সেখানকার প্রাদেশিক শাসনকর্তা হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এ অবৈধ কার্যের প্রতি হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করে দেন। ফলে প্রতি বছরের মত নীল নদের পানি শুকিয়ে যায়।এদিকে নও মুসলিম কৃষকরা সুন্দরী নারী বলি দানের রেওয়াজ চালু রাখবে কিনা, এ ব্যাপারে হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর অভিমত জানতে চাইলে তিনি খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট এক নাতিদীর্ঘ পত্র লেখেন। পত্র পেয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বিস্তারিত অবগত হলেন।নীল নদকে সম্বোধন করে চিঠির অপর পৃষ্ঠায় হযরত ওমর (রাঃ) উত্তর লিখলেনঃ ''ইন কুনতি তাজরী বিনাফসিকি, লা তাজরী। ওয়া ইন কুনতি তাজরী বি আমরিল্লাহ।'' অর্থাৎ '' (হে মিসরের নীল দরিয়া!) যদি তুমি নিজের ইচ্ছায় প্রবাহিত হও, তাহলে তোমার পানি আমাদের প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার পানি বুকে ধরে রাখ। আর যদি মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম মোতাবেক প্রবাহিত হও, তবে পানি ধরে রাখার কোন অধিকার তোমার নেই।'' হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এ চিঠি নীল নদের বুকে নিক্ষেপ করা মাত্রই নীল নদ জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেল। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত নীল নদের পানি প্রবাহিত অবস্থায়
Alert message goes here